সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
নওগাঁয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন কুমিল্লা জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত: সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস পুলিশের সুপারের চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন উদ্ধার, শ্যামল গ্রেফতার মহেশখালীতে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত চিলমারীতে আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ অনুষ্ঠিত ভূরুঙ্গামারীর চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে দ্বিগুণ লাভের সম্ভাবনায় কৃষকরা গোবিন্দগঞ্জে মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান নোয়াখালীতে ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহীদ রিজভীর ছোট ভাইকে কুপিয়ে জখম বগুড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে মারধর রুপালি লাইফ ইন্সুরেন্স এর টুংগীপাড়া মডেল সার্ভিস সেল এর গ্রাহকের মৃত্যু দাবি চেক প্রদান।

মে দিবসের ইতিহাস: রক্তে লেখা সংগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

 

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। এই দিনটি শুধু একটি ছুটির দিন নয়, এটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের ইতিহাস। চলুন জানা যাক কিভাবে একটি নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের ঘটনা থেকে জন্ম নিল বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটি।

হে মার্কেট ট্র্যাজেডি: যেভাবে শুরু ১৮৮৬ সালের ১ মে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেট স্কয়ারে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার শ্রমিক। তাদের একটাই দাবি ছিল – “কাজের সময় দিনে ৮ ঘণ্টা”। সেই সময় শ্রমিকদেরকে দিনে ১০-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো, কোনো অতিরিক্ত ভাতা ছাড়াই।

৪ মে এক সমাবেশে অজ্ঞাতপরিচয় কেউ বোমা নিক্ষেপ করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে নিহত হন ১১ জন শ্রমিক, আহত হন শতাধিক। পরবর্তীতে এই ঘটনার দায়ে ৮ শ্রমিক নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়। প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর অগাস্ট স্পাইস, অ্যালবার্ট পারসন্স, জর্জ এঙ্গেল ও অ্যাডলফ ফিশারকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে স্পাইসের শেষ বক্তব্য ছিল: “আজ আমাদের এই নিঃশব্দতা তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।”

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ,১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে-কে “আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস” হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হতে শুরু করে এই দিন। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর সোভিয়েত ইউনিয়নে মে দিবস রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

বাংলাদেশে মে দিবস,বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস পালন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে ১৯৭২ সালে শ্রম আইন প্রণয়ন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিবসটি পালন করা হয়।

শিকাগোর শহীদদের স্মরণ,শিকাগোর হে মার্কেটে এখনও সেই শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ রয়েছে। সেখানে লেখা আছে: “শ্রমজীবী মানুষেরা এক হও – তোমাদের হারানোর কিছু নেই, শুধু শৃঙ্খল ছাড়া।”

বর্তমানে বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে মে দিবস জাতীয় ছুটির দিন। তবে শ্রমিক অধিকারের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী:

বিশ্বে এখনও ১৬ কোটি মানুষ জোরপূর্বক শ্রম দিচ্ছে
২৪ কোটি শিশু শ্রমিক রয়েছে
৬০% শ্রমিক এখনও অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন
“মে দিবস শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, এটি বর্তমানের সংগ্রামেরও প্রতীক। আজও শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশের জন্য লড়াই করছেন।”

শ্রমিক নেতাদের বক্তব্যে বলেন, শিকাগোর সেই শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি। তাদের আত্মদানের ফলেই আজ আমরা ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার পেয়েছি। কিন্তু এখনও অনেক দাবি আদায় বাকি।”

আগামীর চ্যালেঞ্জ বিশ্বায়নের এই যুগে শ্রমিক আন্দোলন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি: গিগ ইকোনমিতে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা,কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে চাকরির নিরাপত্তা,বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবিলা

মে দিবসের অঙ্গীকার ,মে দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, শ্রমিকের মর্যাদা কোনো দান নয়, এটি অধিকার ,উন্নয়নের সুফল সবার জন্য সমানভাবে বণ্টন করতে হবে,শোষণমুক্ত সমাজ গঠনই হোক আমাদের লক্ষ্য

এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক – শ্রমিকের অধিকার, মানবাধিকার। শিকাগোর সেই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা আজও সংগ্রাম চালিয়ে যাব। কারণ, মে দিবস কেবল অতীতের স্মৃতি নয়, এটি বর্তমানের প্রেরণা এবং ভবিষ্যতের দিশারী।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত