রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
দেশের সবচেয়ে উঁচু পতাকা উড়বে তেঁতুলিয়ার’ বাংলাবান্ধায়। দিনাজপুরে মহিলা পরিষদের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে দুই ভুয়া ডিবি আটক চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ব্রাক মোড় থেকে ছাগল চোর আটক। উন্নত রাষ্ট্র গড়তে হলে পুলিশকে শক্তিশালি করতে হবে: পুলিশ সুপার মারুফাত ঈদগাঁওতে ওপেন হাউজ ডে- আওয়ামী দোসরদের গ্রেপ্তার দাবি ঢাকায় চোর চক্রের ৩ সদস্যকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করেছে সাভার থানা পুলিশ” বাঁশের সাঁকোয় ভরসা ২ উপজেলার মানুষের নওগাঁয় মানবিক বাংলাদেশ শীর্ষক বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত। গোবিন্দগঞ্জের কাটাবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

কুড়িগ্রামে ভিজিএফ এর চাল আত্মসাতে ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

 

রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনী বাড়ী ইউনিয়নে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব ও দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাল বিতরণে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মৃত ব্যক্তি সহ তালিকায় মুসলিম নারীর স্বামীর নাম হিন্দু কিংবা হিন্দু নারীর স্বামীর মুসলিম নাম দিয়ে অন্তত ২ হাজার জনের নামে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ।
চাল আত্মসাতের ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্রমিক নং ১ সুবিধা ভোগী আব্দুল আউয়াল পিতা সরফ উদ্দিন এন আই ডি (৮৬৫৮৩৩৩৭৭১) গ্রাম মালতী বাড়ি, প্রায় ৩ বছর আগে মারা গেছে, ক্রমিক নং ৩,জরিনা বেগম, পিতা বনিজ উদ্দিন এন আই ডি (৪৬০৮৩৩২৪৭৬) গ্রাম মালতি বাড়ি, মারা গেছেন প্রায় ছয় মাস আগে, ক্রমিক নং ১৩,আব্দুর রাজ্জাক পিতা খেজমতুল্লা এনআইডি (৫৫০৮১২১১১৬৪) গ্রাম মালতি বাড়ি, ওয়ার্ড নং ১, মারা গেছে তিন মাস আগে, ক্রমিক নং ৩৬, তসলিম উদ্দিন, পিতা নছর উদ্দিন এন আই ডি ( ৬৮৫৮৬২৭১৮০৮) গ্রাম মালতি বাড়ি, ওয়ার্ড নং ১, মারা গেছেন প্রায় চার বছর আগে।
প্রায় ২ হাজার উপকারভোগী মানুষজন ভিজিএফ এর চাল থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান শাহীন,উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে জানানো হয়, তালিকায় একজনের নাম একাধিকবার ব্যবহার, মৃত ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা এবং এক ওয়ার্ডের লোকজনকে অন্য ওয়ার্ডের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মতো নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, তার প্রতিবেশী মৃত আব্দুল আউয়াল এর নাম তালিকায় রয়েছে, যিনি প্রায় তিন বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। এমন আরও অনেক মৃত মানুষের নাম পাওয়া গেছে তালিকায়। মালতি বাড়ি মোল্লাপাড়া গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী শরিফা বেগম জানান, ভিজিএফ এর তালিকায় তার সিরিয়াল থাকলেও, চাল নিতে গেলে তাকে জানানো হয় তার নাম নেই। তালিকা হাতে পাওয়ার পর সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ক্রমিক নাম্বার ৪২, মজাহার পিতা যাদুচন্দ্র, নং ৪৪, সাহেব আলী, পিতা খোকা চন্দ্র, ক্রমিক নং ৪৬ , ইউনুস পিতা অনিল চন্দ্র, ক্রমিক নং ৫৪, বিলকিস বেগম, পিতা /স্বামী যাদুচন্দ্র, ক্রমিক নং ৫৮, কপিলা, পিতা/স্বামী, অনিল চন্দ্র, ক্রমিক নং ৬৬, হাওয়ানু, পিতা/স্বামী যাদু চন্দ্র, ক্রমিক নং ৬৮ ছকিনা, স্বামী খোকা চন্দ্র, ক্রমিক নং ৭০, সহিতন নেছা, স্বামী অনিল চন্দ্র, ক্রমিক নং ৭৬, চিনি বালা, স্বামী মকবুল হোসেন, ক্রমিক নং ৭৮, আসমা বেগম, স্বামী যাদু চন্দ্র, ক্রমিক নং ৮০ রেজেকা বেগম, পিতা/স্বামী খোকা চন্দ্র, ক্রমিক নং ৮২, রাবেয়া বেগম পিতা / স্বামী অনিল চন্দ্র , ক্রমিক নং ৮৪,মালা রানী , স্বামী নছর উদ্দিন , ক্রমিক নং ৯০, সাহিদা পিতা/স্বামী জাদুচন্দ্র , ক্রমিক নং ৯১ গীতা রানী পিতা/ স্বামী শামসুল হক , ক্রমিক নং ৯২,আহিনা বেগম পিতা/ স্বামী খোকা চন্দ্র, ক্রমিক নং ৯৪ জায়দা খাতুন পিতা/স্বামী অনিল চন্দ্র, ক্রমিক নং ১০২ ছকিলা বেগম পিতা/ স্বামী জাদুচন্দ্র, ক্রমিক নং ১০৪ আলেয়া বেওয়া, পিতা/স্বামী খোকা চন্দ্র, ক্রমিক নং ১০৬,আমেনা বেগম পিতা/স্বামী অনিল চন্দ্র, ক্রমিক নং১১০, হিমানী রায় পিতা/স্বামী একরামুল হক, ক্রমিক নং ১১৪, হাওয়া বিবি, পিতা/ স্বামী জাদুচন্দ্র, ক্রমিক নং ১১৬, রোকসানা বেগম পিতা স্বামী খোকা চন্দ্র, ক্রমিক নং ১১৮, নুরজাহান বেগম পিতা/ স্বামী অলিল চন্দ্র, উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এরকম ভুয়া তালিকা প্রণয়ন করে আত্মসাৎ করার বিষয়টি প্রমানিত হয়। নাম আছে চাল পাননি এমন অভিযোগ করেছেন, সুবিধা বঞ্চিত প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ। গ্রামের অসহায় ও হত দরিদ্র মানুষজন বলেন, চাল যদি চেয়ারম্যান খেয়ে ফেলে, তাহলে আমাদের তো বাঁচার উপায় নাই। অভিযোগকারী মাহমুদুল হাসান শাহীন জানান, ২ হাজার জনের নাম অন্য ওয়ার্ডের অগ্রাধিকার তালিকা ও মাস্টার রোল তালিকায় একাধিকবার ব্যাবহার করা হয়েছে। ওই নামের বিপরীতে বরদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য জানান, ওই ইউনিয়নের চেয়াররম্যান এরশাদুল হক, কয়েকজন সদস্যের যোগশাজোসে ২ হাজার জনের ভুয়া ভিজিএফ তালিকা করে চাল আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান এরশাদুল হক এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কে দায়িত্ব দিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফিজানুর রহমান জানান, তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। অফিসিয়াল ব্যস্ততার কারণে তদন্ত এখনো শুরু করা হয়নি। খুব শীঘ্রই তদন্ত শুরু হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত